আজকে শবে বরাতের রাত বা লাইলাতুল বরাত। সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানগন সারারাত ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে আজকের রাত্রি কাটিয়ে থাকবেন। অনেকেই ইন্টারনেটে শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম জানতে চেয়ে পোস্ট করতেছেন। আবার অনেকেই আছেন যারা শবে বরাতের নামাজের নিয়ত জানতে চেয়েছেন। তাই আমরা আপনাদের মাঝে আজকে শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে আলোচনা করব।
আশাকরি আমাদের এই আজকের পোস্ট এর মাধ্যমে আপনি শবে বরাতের নামাজ কিভাবে পড়বেন এবং এর নিয়ত সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আপনাকে অনুরোধ করবো দয়া করে মনোযোগ সহকারে আজকের পোস্টটি পড়ুন এবং নামাজের নিয়ম ও নিয়ত জেনে নিন।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
আজকে দিবাগত রাত শবে বরাত নামাজের মাধ্যমে কাটিয়ে দিতে চাই অনেক মুসলমান ভাই গন। শবে বরাতের নামাজের নিয়ত সম্পর্কে খোঁজ করতেছেন। তাই এখন আমরা আপনাদের সাথে আরবি এবং বাংলা অনুবাদ সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
আমাদের মাঝে কিছু মানুষ রয়েছে যারা আরবী ব্যকরণ ভালো জানেন না কিন্তু তার নামায পড়ার অনেকটাই আগ্রহ রয়েছে তারা চাইলে শবে বরাতের নামাজের বাংলা নিয়ত করতে পারেন।
বাংলায় নিয়ত করলে এই ভাবে করতে পারেন: ‘শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ/ সালাত কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবর’।
শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম
আজকে শবে বরাত নামাজের জন্য অনেকেই শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম জানতে চেয়েছেন। তাই এখন আমরা আপনাদের সাথে শবে বরাতের নফল নামাজ আদায় নিয়ম শেয়ার করবেন। খুব মনোযোগ সহকারে দয়াকরে নিয়ম গুলো দেখার অনুরোধ রইলো।
দুই রাকাত তহিয়াতুল অজুর নামাজ, নিয়ম- প্রতি রাকাতে আল হামদুলিল্লাহ (সূরা ফাতিহা) পড়ার পর , ১ বার আয়াতুল কুরসি এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ (সূরা এখলাছ)। ফজিলত: প্রতি ফোটা পানির বদলে সাতশত নেকী লিখা হবে।
দুই রাকাত নফল নামাজ, নিয়ম- ১ নম্বর নামাজের মত, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসি এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ, অতঃপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফজিলত: রুজিতে বরকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বকশিস পাওয়া যাবে।
আট রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে পড়তে হবে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, সূরা এখলাছ ৫ বার করে। একই নিয়মে বাকি সব। ফজিলত: গুনাহ থেকে পাক হবে, দু’আ কবুল হবে এবং বেশি বেশি নেকী পাওয়া যাবে।
১২ রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, ১০ বার সূরা এখলাছ এবং এই নিয়মে বাকি নামাজ শেষ করে, ১০ বার কালেমা তওহীদ, ১০ বার কলেমা তামজীদ এবং ১০ বার দুরূদ শরীফ।
১৪ রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে, নিয়ম- প্রতি রাকাত সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়ুন। ফজিলত: যে কোনো দু’আ চাইলে তা কবুল হবে।
চার রাকাত নফল নামাজ এক সালামে পড়তে হবে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পর ৫০ বার সূরা এখলাছ শরীফ। ফজিলত: গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হবে যে সদ্য মায়ের গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।
আট রাকাত নফল নামাজ এক সালামে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা এখলাছ শরীফ। ফজিলত: এর ফজিলতে সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, হযরতে সৈয়্যদাতুনা ফাতেমা রাদিআল্লাহু আনহা এরশাদ করেছেন, ‘আমি ওই নামাজ আদায় কারীর সাফায়াত করা ব্যতীত জান্নাতে কদম রাখব না।
শবে বরাতের ফজিলত
শবে বরাতের নামাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে। এখন আমরা শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে জানব।
রোজার ফজিলত হুজুর সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে শাবানে ১ দিন রোজা রেখেছে, তাকে আমার সাফায়াত হবে। আরো একটি হাদিস শরীফে আছে যে, হুজুর সালল্লাহু তালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শাবানের ১৫ তারিখে রোজা রাখবে, তাকে জাহান্নামের আগুন ছোঁবে না। এছাড়াও পড়তে পারেন ‘সালাতুল তাসবীহ এর নামাজ। এই নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় চাচা হযরত আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুকে এই নামায শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এই নামাজ পড়লে আল্লাহ আয-যাওযাল আপনার আউয়াল আখেরের সগীরা কবীরা জানা অজানা সকল গুণাহ মাফ করে দেবেন।
‘হে চাচা জান! আপনি যদি পারেন, তবে দৈনিক একবার করে এই নামাজ পড়বেন। যদি দৈনিক না পারেন, তবে সপ্তাহে একবার পড়বেন। যদি সপ্তাহে না পারেন, তবে মাসে একবার পড়বেন। যদি মাসে না পারেন, তবে বছরে একবার পড়বেন। যদি এটাও না পারেন, তবে সারা জীবনে একবার হলেও এই নামাজ পড়বেন (তবুও ছাড়বেন না)।
শবে বরাতের রাতে করণীয়
শবে বরাতের রাতে কিছু অত্যন্ত আবশ্যক কাজরা ইবাদত-বন্দেগির বিষয় রয়েছে। যা আপনাকে অবশ্যই নিয়ম মেনে পালন করতে হবে।
যা যা করা উচিত: (ক) নফল নামাজ ১. তাহিয়্যাতুল অজু, ২. দুখুলিল মাসজিদ, ৩. আউওয়াবিন, ৪. তাহাজ্জুদ, ৫. ছলাতুত তাসবিহ ৬. তাওবার নামাজ, ৭. ছলাতুল হাজাত, ৮. ছলাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া।
(খ) নামাজে কিরাআত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা। (গ) পরের দিন নফল রোজা রাখা; (ঘ) কোরআন শরিফ- যেমন: সুরা দুখান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা; (ঙ) দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; (চ) তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা; (ছ) দোয়া-কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আসকার ইত্যাদি করা; (জ) কবর জিয়ারত করা; (ঝ) নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা।
শবে বরাতের সর্তকতা
শবে বরাতের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত বন্দেগির রাত। সুতরাং খুবই সতর্কতার সাথে এবাদত-বন্দেগি করতে হবে। অনেকেই এই দিনটি বিভিন্ন আনন্দ উল্লাস এর মাধ্যমে কাটিয়ে থাকে। কিন্তু এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এখন আমরা শবে বরাতের সর্তকতা সম্পর্কে জানব।
- সঠিক নিয়মে শবে বরাতের নামাজ সালাত আদায় করা আবশ্যক।
- সবাই মিলে একসাথে সমবেত হয়ে দুনিয়াবী কথা বলা যাবে না।
- ইবাদত বন্দেগী না হয়ে অযথা ঘোরাফেরা করা চলবে না
- অযথা আনন্দ-উল্লাস থেকে বিরত থাকতে হবে
- আতশবাজি পটকা ফোটানো যাবে না।
- শবে বরাতে আনন্দ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে রুটি হালুয়া তৈরি করা যাবে না। আপনারা চাইলে এই রান্নার আয়োজন শবে বরাতের আগে অথবা পরে করতে পারেন।
- অযথা কথা বলা এবং বেপরোয়াভাবে আচরণ করা যাবে না
- অন্য কারো ইবাদতে বা ঘুমের মধ্যে তাকে ডিস্টার্ব করা যাবে না।
সর্বশেষ কথা
আজকের সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকের পোস্টে আমরা শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। এছাড়া আপনার সাথেও শবে বরাত এর তাৎপর্য ও করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয় রয়েছে তা জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি আজকের পোস্ট এর মাধ্যমে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন।
আরও দেখুনঃ