ঘরোয়া পদ্ধতিতে মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা

আসসালামু আলাইকুম। আজকে আপনাদের জন্য অনেক উপকারী একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম।  আপনারা যারা ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্থায়ীভাবে মোটা হতে ইচ্ছুক তাদের জন্য আজকের পোস্টটি অনেক উপকারী। আজকের পোষ্টে চামড়া মোটা হওয়ার জন্য একটি খাদ্য তালিকা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব।আপনারা যদি মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা খুঁজে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি আপনাদের জন্যই।

আপনি যদি চিকন হয়ে থাকেন এবং মোটা হওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম ওষুধ খেয়ে থাকেন কিন্তু কোনো ফল না পেয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্টে দেখানো মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা সংগ্রহ করে নিন।  আপনি যদি এই খাদ্যতালিকা টি ঠিকমতো নিয়ম মেনে চলতে পারেন তাহলে আশা করি আপনি স্থায়ীভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন।

মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা

আপনি যদি প্রাকৃতিক ভাবে মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা খুজে থাকেন তাহলে আপনাকে এখন আমরা এর খাদ্য তালিকা টি শেয়ার করতে পারি। দয়াকরে পোস্টের এই অংশ হতে আপনার কাংখিত প্রাকৃতিক ভাবে মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা টি সংগ্রহ করে নিন এবং এগুলো মেনে চলুন।

সকালের খাবার (Breakfast)-

সকালের খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা মানবদেহে সারাদিনের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। সকালের খাবার খাওয়ার জন্য সব চেয়ে উত্তম সময় হল ৭-৮ টা। অথবা আপনি যদি আরো সকালে উঠেন, তাহলে আপনার সময় অনুযায়ী খেয়ে নেবেন। নিচের ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকাটি অনুসরণ করলে আমি নিশ্চিত আপনার ওজন বাড়বেই।

১। সকালে উঠে বাদাম ও কিসমিস: ওজন বাড়ানোর জন্য বাদাম আর কিসমিসের অনেক কার্যকর। রাতে ঘুমাবার সময় অল্প জলে আধ কাপ কাঠ বাদাম ও কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন ৷ সকালে সেগুলো ফুলে উঠলে খেয়ে নিন।

২। ডিম (Egg): ডিমে প্রচুর ক্যালরি এবং প্রোটিন আছে। ডিমের কুসুমে অনেক ফ্যাট আছে যেটা ওজন বাড়ানোর জন্য অনেক জরুরী। আপনি প্রতিদিন সকালে দুইটা করে ডিম খেতে পারেন। ডিম সিদ্ধ খাওয়ার চেয়ে তেলে ভাজি করে খাওয়া আপনার জন্য বেশি কার্যকরী।

৩। পরোটা (Poratha): বিষাক্ত তেলযুক্ত বাইরের পরোটা না খেয়ে বাসায় বানানো পরোটা খাবেন। সকালে দুইটা বা এর অধিক পরোটা খেতে পারেন।

৪। গিলা-কলিজা বা নেহারি: ওজন বাড়ানোর জন্য পরোটার সাথে সাধারণ সবজি না খেয়ে গিলা-কলিজা বা নেহারি খাওয়া উত্তম। কলিজাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ফ্যাট আছে।

৫। ফলমূল (Fruits): সকালের নাস্তায় ফলমূল রাখতে পারেন। ফলের মধ্যে আপেল, আঙ্গুর, কলা, নাশপাতি, ইত্যাদি ওজন বাড়ানোর জন্য ভাল।

৬। সবজি (Vegetables): পরোটার সাথে প্রতিদিন কলিজা ভূনা না খেয়ে মাঝে মাঝে সবজি খাবেন। সবজির মধ্যে, আলু, গাঁজর, শিম, ডাল, ইত্যাদি ওজন বাড়ানোর জন্য ভাল।

সকালের খাবারের পর ১১-১২ টার দিকে কিছু হালকা খাবার (Snacks) খাওয়া আপনার জন্য খুব কার্যকরী। দেখে নেই সকাল পরবর্তী আপনার হালকা খাবার গুলো কি কি।

১। সিঙ্গারা (Singara): বাইরের অস্বাস্থ্যকর সিঙ্গারা না খেয়ে বাসায় তৈরি করে খেতে পারেন। বাইরে খেলেও ভাল মানের হোটেল থেকে খাবেন। ভাল মানের হোটেল হলেই যে স্বাস্থ্যকর হবে সেটা বলছি না।

২। সমুচা (Samucha): বাসায় বানাতে না পারলে বাইরেরটা খেতে পারেন। তবে বাসায় বানিয়ে খেতে পারলে ভাল।

৩। ডালপুরি (Dalpuri): ডালপুরি খুব সুস্বাদু খাবার এবং ওজন বাড়ানোর জন্য ভাল।

এসব খাবার নিয়মিত না খাওয়াই ভাল বিশেষকরে যদি বাইরে তৈরি হয়। এসবের পরিবর্তে মাঝে মাঝে চা, কফি, বিস্কিট, কেকও বা কলাও খেতে পারেন।

দুপুরের খাবার (LUNCH)

দুপুরে খাবার পেট ভরে খাবেন এবং খাওয়ার পর পারলে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ঘুমাবেন। এটা খাবার হজমে সহায়তার পাশাপাশি খাবারের পুষ্টিগুণগুলো দেহের মধ্যে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।

১। ভাত (Rice): আমরা ভাবি ভাত বেশি খেলেই মানুষ মোটা হয়। এটা একটা ভুল ধারণা। ভাত বেশি খেলে পেট ফুলে যায় মানে ভুরি বাড়ে কিন্তু স্বাস্থ্য বাড়ে না। তাই ভাত যতটা প্রয়োজন ততটা খাবেন।

২। আলুপরোটা (Aluporotha): মাঝে মাঝে ভাত না খেয়ে আলু পরোটা খেতে পারেন। শুধু পরোটা বা রুটিও খাওয়া যাবে।

৩। মাংস (Meat): আপনার ওজন বাড়ানোর খাদ্য তালিকায় অবশ্যই মাংস থাকতে হবে। গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগির মাংস এসবে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন, ক্যালরি, ফ্যাট আছে যে, ওজন বাড়ানোর জন্য অনেক উপকারি। হার বা হাড্ডি যুক্ত মাংস এবং চর্বিযুক্ত মাংস বেশি বেশি খাবেন। শুধু চর্বি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অনেক উপাদান আছে।

৪। মাছ (Fish): মাছের মধ্যে ওজন বাড়ানোর অনেক খাদ্য উপাদান রয়েছে। বড় মাঝ খেলে দুই পিস খাবেন। মাছের মধ্যে পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, ইলিশ, মাগুর, বোয়াল, রুই, কাতলা, ইত্যাদি মাছে প্রচুর ফ্যাট এবং ক্যালরি আছে। মাঝে মাঝে শুটকি মাছ খেতে পারেন। শুটকি মাছে অনেক প্রোটিন থাকে।

৫। শাক-সবজি (Vegetable): দুপুরের খাবারে শাক-সবজি ভর্তা, ভাজি বা তরকারি খেতে পারেন। তাহলে খাবার ধরনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। ফলে বেশি খেতে ইচ্ছে করবে।

৬। চা-কফিঃ দুপুরে খাওয়ার পর চা-কফি খেলে নিজেকে অনেক সতেজ ও প্রাণবন্ত লাগে। চা খেলে সব সময় দুধ চা খাবেন।

এসব খাবারের পাশাপাশি মাঝে মাঝে দুপুরে খিচুরি, বিরিয়ানি খেতে হবে। এটা রাতের বেলায়ও খাওয়া যাবে।

বিকেলের খাবার
ওজন বাড়ানোর জন্য দুপুরের খাবারের পর বিকেলে বা সন্ধ্যায় কিছু খাওয়া উচিত। এটা আপনার দেহের অতিরিক্ত ক্যালরি জমাতে সাহায্য করে। দেখে নেই মোটা হবার খাবার তালিকায় বিকেলে আপনি কি কি খেতে পারেন।

১। ফলমূল (Fruits): বিকেলে ফলমূল খেলে শরীরের পাশাপাশি মন থাকে। বিকেলে আপনি যে কোন মৌসুমি ফল খেতে পারেন। এছাড়াও কমলা, কলা, বেদানা, জাম, পেয়ারা, খেজুর, পাকা পেপে, কালোজাম, দুধজাম, কামরাঙ্গা, কাঁঠাল, ইত্যাদি মোটা হওয়ার জন্য কার্যকরী ফল।

২। মোগলাই পরোটা (Moglai Porotha): বিকেলে বা সন্ধ্যায় মোগলাই পরোটা খুব ভাল খাবার।

৩। মিষ্টি (Sweet): আমাদের দেশে অনেক ধরনের সুস্বাদু মিষ্টি পাওয়া যায়। রসমালাই, রসগোল্লা, পানতোয়া, স্পঞ্জ মিষ্টি, জিলাপি, ছানা-জিলাপি, গোপালভোগ, কাটারিভোগ, সন্দেশ, ইত্যাদি। মাঝে মাঝে দই-মিষ্টি খেতে পারেন।

৪। বিস্কিট এবং কেক (Biscuits & Cake): বিকেলের খাবারে কেক বা বিস্কিট খেতে পারেন। সাথে দুদ চা বা কফি রাখলে আরো ভাল হবে।

৫। চিকেন ফ্রাই (Chicken Grill Or Chicken Fry): বিকেলে বা সন্ধ্যায় বা ফ্রাই খাবেন। মোটা হওয়ার জন্য চিকেন গ্রীলের চেয়ে ফ্রাই অনেক ভাল। অথবা গরুর মাংসের কাবাবও খেতে পারেন।

এছাড়াও আপনি সিঙ্গারা, পুরি, সমুচা খেতে পারেন। সকালের হালকা খাবার আর বিকেলের হালকা খাবার পরিবর্তন করে খেতে পারেন। অর্থাৎ আপনি সকালেরগুলো বিকেলে এবং বিকেলের গুলো সকালে খেতে পারেন।

রাতের খাবার (DINNER)

ওজন বাড়ানোর জন্য রাতের খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা সারাদিন যা খাই, সারাদিনের কাজকর্ম বা পরিশ্রমে সেগুলো খরচ হয়ে যায়। তাই রাতের খাবারটা স্বাস্থ্যসম্মত এবং কার্যকারী হতে হবে। আমাদের শরীর যেন মোটা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি এবং প্রোটিন জমা করতে পারে। তবে মনে রাখবেন ঘুমানোর সর্বনিম্ন দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাওয়া উচিত।

১। ভাত (Rice): রাতে ভাত খেতে পারেন। তবে ভাত খেয়ে পেট না ভরিয়ে, ভাতের সাথে খাওয়া অন্যান্য খাবার বেশি বেশি খেয়ে পেট ভরান। কারণ ভাতে আরে প্রচুর ফাইবার। ফাইবার পেট ভরানো ছাড়া শরীরের কোন কাজে লাগে না। ফাইবারের কার্যক্রম খাবার প্লেট থেকে টয়লেট।

২। রুটি (Ruti): রাতের বেলায় রুটি খেলে ২-৪ টা রুটি খেতে পারেন। রুটির সাথে খাওয়া মাংস খেতে পারলে ভাল। মিষ্টি দিয়ে রুটি দিয়েও খেতে পারেন। সবজি রুটি না খাওয়াই ভাল। কারণ ফাইবারের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

৩। মাংস (Meat): রাতের খাবারে মুরগির মাংস খুবই ভাল। মুরগির রানের মাংস বেশি বেশি খাবেন। মুরগির বুকের মাংসে প্রচুর ফাইবার আছে। এটা এড়িয়ে যাবেন।

৪। মাছ (Fish): ওজন বাড়ানোর জন্য রাতের বেলায় ছোট মাছ খাওয়া ভাল। এতে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি প্রচুর ক্যালরি পাওয়া যায়।

ঘুমাবার ঠিক আগেই দুধ ও মধু: ওজন বাড়াবার জন্য একটা একটা অব্যর্থ কৌশল। রাতের বেলা ঘুমাবার আগে অবশ্যই পুষ্টিকর কিছু খাবেন। ঘুমাবার আগে প্রতিদিন এক গ্লাস ঘন দুধের মাঝে বেশ অনেকটা মধু মিশিয়ে খেয়ে নেবেন।

ঘুম (SLEEP)
ওজন বাড়ানোর জন্য খাবারের পাশাপাশি সঠিক সময় ঘুমানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি শুধু খেলেন কিন্তু ঘুমালেন দিনে ৩-৪ ঘণ্টা তাহলে আশানুরূপ ফল পাবেন না। দিনে আপনাকে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। দুপুরে খাওয়ার পর কিছুক্ষন ঘুমাতে পারলে আরো ভাল হয়। ঘুম মানব দেহ ক্রিয়ার (Body Functioning) জন্য। সারাদিন যা খেলেন সেগুলো সঠিকভাবে কাজ করার জন্য শরীরের বিশ্রাম দরকার আর শরীরের বিশ্রাম হল ঘুম।

উপরের খাবার তালিকায় উল্লেখিত খাবারগুলো আপনার ইচ্ছেমত সাজিয়ে নিন। যখন যেটা খেতে ইচ্ছে করে খাবেন। আর বাসায় খাবারের জন্য অপেক্ষা করা বাদ দিয়ে নিজেই নিয়ে নিন। অন্যকোন সমস্যা না থাকলে তেলে ভাজা খাবার, মিষ্টি, লালা মাংস, খিচুরি, বিরিয়ানি, দুধ, ডিম, কলা এগুলো বেশি বেশি খাবেন।

শেষ কথা

সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।  আশা করি আজকের মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা নিয়ে পোস্টটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে এবং আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।  আপনি যদি চান তাহলে এই পোষ্টটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন যাতে করে আপনার বন্ধুরাও প্রাকৃতিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে খাদ্য তালিকা মেনে মোটা হতে পারে।আজকে এ পর্যন্তই দেখা হবে আবার আগামী কোন পোস্ট নিয়ে।

আরও দেখুনঃ

খুব সহজে স্থায়ী ভাবে মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি? ১০টি কার্যকরী

মোটা হওয়ার সহজ প্রাকৃতিক উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায় ও ডায়েট চার্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *