৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, রোজ শুক্রবার, মহাপঞ্চমী এর মধ্য দিয়ে এবছর দুর্গা পূজা শুরু হবে। এরপর মহাষষ্ঠী – ১ অক্টোবর রোজ শনিবার, মহাসপ্তমী – ২ অক্টোবর রোজ রবিবার, মহাঅষ্টমী – ৩ অক্টোবর রোজ সোমবার, মহানবমী – ৪ অক্টোবর রোজ মঙ্গলবার, মহাদশমী – ৫ অক্টোবর রোজ বুধবার এর মধ্য দিয়ে এবছর দুর্গা পূজা শেষ হবে।
দুর্গা পূজা ২০২২: দুর্গাপূজা একটি বিখ্যাত হিন্দু উৎসব যা সাধারণত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ওড়িশা এবং বিহার রাজ্যে ব্যাপক উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সাথে উদযাপিত হয়। এটি বাংলাদেশেও ব্যাপক ভাবে পালিত হয়। তাই আজকের পোস্টে আমরা দুর্গা পূজা নিয়ে সকল বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করব।
বিশ্বাস করা হয় যে এই উৎসব মন্দের উপর ভালোর বিজয়ের উদাহরণ দেয়, ঠিক যেমন দেবী দুর্গা মহিষাসুর দানবকে হত্যা করেছিলেন এবং মন্দ কে শেষ করে ভালোর জয় স্থাপনা করেছিলেন ।
দুর্গা পূজা ২০২২
অনেকে দুর্গা পূজা ২০২২ কবে তা জানতে চেয়েছেন। তাই আমরা এখন দুর্গা পূজা কবে শুরু হবে সে সম্পর্কে জানব। আশ্বিন মাসে দশ দিন ধরে দুর্গাপূজার উৎসব পালিত হয়। কিন্তু, প্রকৃত অর্থে, উৎসব ষষ্ঠ দিন থেকে শুরু হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনেই দেবী দুর্গা পৃথিবীতে এসেছিলেন। দুর্গাপূজা 2022 আগামী 1 অক্টোবর শুরু হবে এবং আগামী 5 অক্টোবর শেষ হবে। দুর্গাপূজার পাঁচ দিন ষষ্ঠী, মহা সপ্তমী, মহা অষ্টমী, মহা নবমী এবং বিজয়া দশমী হিসেবে পালন করা হয়। প্রতিটি দিনের নিজস্ব অর্থ এবং তাৎপর্য রয়েছে। আমরা প্রত্যেকটি দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। দয়া করে নিচে দেখুন।
মহালয়া (Mahalaya)
দুর্গাপূজা উৎসবের প্রথম দিন মহালয়া নামে পরিচিত। কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল।
নবরাত্রি (Nabaratri)
এই বছর নবরাত্রি ২৬ শে সেপ্টেম্বর ২০২২ এ শুরু হবে এবং ৫ই অক্টোবর, ২০২২ এ শেষ হবে।
দুর্গা পূজা পদ্ধতি PDF
এই বছর দুর্গা পূজা নির্ঘন্ট সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। তাই আমরা এ সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করলাম। দুর্গা পূজা পদ্ধতি PDF জানতে সম্পূর্ণ পোস্ট টি পড়ুন।
দুর্গা পূজা ২০২১: অক্টোবর 1 () – অক্টোবর 5 ()
ষষ্ঠী: এটি দুর্গা পূজার প্রথম দিন : অক্টোবর 1 ()
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ষষ্ঠ দিনে (মহাষষ্ঠী) দেবী দুর্গা তার চার সন্তানের (দেবী সরস্বতী, দেবী লক্ষ্মী, ভগবান গণেশ এবং ভগবান কার্তিকেয়) সাথে পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন।মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যা বেলায় দেবী দুর্গার মূর্তির মুখমণ্ডল উন্মোচন করা হয় এবং আচার অনুষ্ঠান করা হয়। এবং ঢাক নামে পরিচিত ড্রাম প্রতিটি প্যান্ডেলে বাজানো হয়।
মহা সপ্তমী : দুর্গা পূজার দ্বিতীয় দিন : 2 অক্টোবর ()
মহা সপ্তমীতে মহা পূজা হয়।
নবপত্রিকা পূজা / কলা বউ পুজো : সূর্য ওঠার আগে, একটি কলাগাছ পবিত্র জলে স্নান করানো হয় এবং তারপর এই পবিত্র কলা গাছ টিকে একটি নববধূ মহিলার (কলা বউ) মত একটি নতুন শাড়ি পড়ানো হয়।
মহা অষ্টমী: দুর্গা পূজার তৃতীয় দিন: 3 অক্টোবর ()
দুর্গা অষ্টমী : পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, বিশ্বাস করা হয় যে দেবী দুর্গা মহা অষ্টমীতে মহিষাসুরকে হত্যা করেছিলেন।
এই দিনে ভক্তরা ‘অঞ্জলি’ র মাধ্যমে দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন।
কুমারী পূজা : 9 বছরের কম বয়সী মেয়েদের দেবী দুর্গা রূপে চিত্রিত করা হয় এবং পূজা করা হয়। এই আচারটি ‘কুমারী পূজা’ নামে পরিচিত।
সন্ধি পূজা : এর পরে, ‘সন্ধি পূজা’ করা হয়।
নবমী: দুর্গাপূজার চতুর্থ দিন: অক্টোবর 4 ()
‘সন্ধি পূজা’ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় মহা নবমী।
‘মহা নবমী‘ উপলক্ষে ‘মহা আরতি’ করা হয়।
বিজয় দশমী: দুর্গা পূজার পঞ্চম ও শেষ দিন: অক্টোবর 5 ()
বিজয়া দশমী উৎসবের শেষ দিন। ‘ঘট বিসর্জনের’ (পূজার আনুষ্ঠানিকতার সমাপ্তি ঘোষণা করে দুর্গার প্রতীকী নিমজ্জন) পরে নারীরা ‘সিঁদুর খেলা’ য় মেতে ওঠে ।
এর পর মহা দশমীর সন্ধ্যায় , গঙ্গা নদীর পবিত্র জলে বিসর্জন দেয়া হয় দেবী দুর্গার মূর্তি। বিসর্জনের আগে, উপাসকরা ট্রাকএ উঠে এবং হেঁটে , ঢাক বাজিয়ে এবং নেচে মিছিল নিয়ে শোভা যাত্রা করে ।
দেবী দুর্গার ইতিহাস
এখন আমরা পোস্টের এই অংশে দেবী দুর্গার ইতিহাস সম্পকে সকল তথ্য জানব।
দুর্গা পুজোর সূচনা হয়েছিল বহু প্রাচীন কালেই । দুর্গার পুজো শুরুর যথার্থ নথি না পাওয়া গেলেও, বৈদিক সাহিত্যে দুর্গার পরিচয় আছে। অনেকেরই মতে, সম্ভবত মোঘল আমল থেকেই ধনী পরিবারগুলিতে দুর্গা পুজো করা হত। ইতিহাস বলছে দেবীর পুজো সম্ভবত ১৫০০ শতকের শেষ দিকে প্রথম শুরু হয়। সম্ভবত দিনাজপুর- মালদার জমিদার স্বপ্নাদেশের পর প্রথম পারিবারিক দুর্গা পুজো শুরু করেছিলেন। তবে এই দুর্গার রূপ ছিল অন্যরকম। লোককথা মতে আদি দুর্গার চোখ গোলাকার ও উজ্জ্বল এবং দেবী সাদা বাঘ ও সবুজ সিংহের উপর বিরাজ করেন।
অন্য সূত্রানুসারে, তাহেরপুরের রাজা কংসশনারায়ন বা নদীয়ার ভবানন্দ মজুমদার বাংলায় প্রথম শারদীয়া বা শরৎ দুর্গা পূজা সংগঠিত করেন। এরপরে রাজশাহির রাজা এবং বিভিন্ন গ্রামের হিন্দু রাজারা প্রতি বছর এই পুজো আরম্ভ করেন। আবার কলকাতায় ১৬১০ সালে বারিশার রায়চৌধুরী পরিবার প্রথম দূর্গাপুজার আয়োজন করেছিল বলে জানা যায়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর রাজা নবকৃষ্ণদেব লর্ড ক্লাইভের সন্মানে কলকাতার শোভা বাজার রাজবাড়িতে দূর্গাপূজার মাধ্যমে বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছিলেন এবং তাঁর জন্য বিদেশ থেকে নিকি বাঈ নামে এক নর্তকীকে আনিয়ে ছিলেন। ব্রিটিশ বাংলায় এই পূজা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পায় এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে দূর্গাপুজো স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে জাগ্রত হয়।
১৯১০ সালে কলকাতায় প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে বারোয়ারি পুজোর শুরু হয়। সনাতন ধর্মতসাহিনি সভা, বাগবাজারে সার্বজনীনে একটি দুর্গোৎসবের সূচনা করেন যা সম্ভব হয়েছিল জনসাধারণের সহযোগিতার সাহায্যে। তারপর থেকে গোটা বাংলায় দুর্গা পুজোর প্রবল প্রচার হয় এবং বর্তমানে এটি বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তাই বাংলা ছাড়িয়ে এই উৎসব পারি দিয়েছে বিদেশেও।
শেষ কথা
সম্পুর্ন পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা চেষ্টা করেছি যে এই পোষ্টের মাধ্যমে দুর্গাপূজা উপলক্ষে সকল তথ্য জানানোর। আশা করি আপনি আমাদের এই পোস্ট হতে দুর্গাপূজা কবে শুরু হবে এবং দুর্গাপূজা কিভাবে পালিত হয় সে সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্টটি ভাল লেগে থাকলে আপনার বন্ধু বান্ধব দের মাঝে শেয়ার করুন।