জাতীয় শোক দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি জাতীয় দিবস। প্রতিবছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবসটি শোকের সাথে পালন করা হয়। এ দিবসে কালো পতাকা উত্তোলন ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিবসের উৎপত্তি।
অনেকেই ইন্টারনেটে ১৫ আগস্ট সম্পর্কে রচনা খুজে বেড়াচ্ছে। তাই এখন আমরা আপনাদের জন্য অঙ্কে সুন্দর এবং তথ্যবহুল একটি জাতীয় শোক দিবস রচনা নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করলে আপনার জন্য এই রচনাটি অনেক উপকারে আসবে।
১৫ আগস্ট সম্পর্কে রচনা
শেখ মুজিবের জন্ম:
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জের মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের বাইকার নদী তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন । তিনি শেখ বংশের গোড়াপত্তনকারী শেখ বোরহান উদ্দিনের বংশধর ।
তার বাবা শেখ লুৎফুর রহমান গোপালগঞ্জের দায়রা আদালতের হিসাব রক্ষক ছিলেন এবং তার মা সায়রা খাতুন । চার কন্যা এবং দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় । শেখ মুজিবুর রহমানের বড় বোনের নাম ফাতেমা বেগম । মেজ বোন আসিয়া বেগম । সেজ বোন হেলেনা ও ছোটবোন লাইলি এবং তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের ।
তার নানা শেখ আব্দুল মজিদ তার নামকরণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান । তার ছোটবেলায় ডাক নাম ছিল খোকা । পারিবারিক আনন্দ ঘন পরিবেশে টঙ্গীপাড়ায় তার শৈশবের দিনগুলো কাটছিল । বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী । অনন্য । গরিব-দুখী মানুষের প্রতি তিনি ছিলেন সহমর্মী । একবার তো বাল্যকালে ঘটান আশ্চর্য এক ঘটনা । নিজের বাড়ির গোলার ধান গ্রামের গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেন । তার পিতা শেখ লুৎফুর রহমান এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন-
এবার বন্যায় চাষীদের সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে । আকালে পড়েছে তারা । আমাদের মত ওদেরও পেট আছে । ক্ষুধা আছে । ওরাও মত বাঁচতে চায় । তখন তার বাবা ছেলের এই সৎ সাহস ও মহানুভবতা দেখে বেশ খুশি হলেন । এভাবেই তিনি গ্রামের গরীব দুঃখীদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
কথিত আছে তিনি সমিতি করেও গরিব-দুঃখীদের প্রতি সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন । এজন্যই পরবর্তীতে বন্ধু মহল এবং জ্ঞানী গুণীদের পক্ষ থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয় । পরবর্তীতে জাতির পিতা সম্মানজনক এই উপাধিতে ভূষিত করা হয় । সম্প্রতি তার একশত জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিব বর্ষের ঘোষণা দেওয়া হয় ।
শেখ মুজিবের শিক্ষা:
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ৭ বছর বয়সে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা শুরু করেন । ৯ বছর বয়সে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে গোপালগঞ্জ পাবলিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন । তার পিতার চাকরি বদলিজনিত কারণে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া বিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন । এবং সেখানে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এবং সেখানে তিনি কঠিন অসুস্থ হয়ে পড়েন । পরবর্তী পূর্ণ আরোগ্য লাভ করতে বেশ সময় লেগেছিল ।
পরবর্তীতে তিনি ১৯৩৮খ্রিস্টাব্দের সুস্থ হওয়ার পর গোপালগঞ্জের মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন । এ সময় গৃহ শিক্ষক ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং বহু বছর জেল খাটা কাজী আব্দুল হামিদ । পরবর্তীকালে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ।
১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে শেখ মুজিব কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই.এ .এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন । বিখ্যাত সেই হোটেলের ২৪ নং কক্ষে থাকতেন বিধায় ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার সম্মানার্থে ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষের ঘোষণা দেন।
২০১১ খ্রিস্টাব্দে ২৩ ফেব্রুয়ারি কক্ষটি সম্মুখে তার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয় । ভারত বিভাজনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ভর্তি হন । সেখানে কর্মচারীদের বিক্ষোভ মিছিলের উস্কানি দাতা হিসেবে তাকে বহিষ্কার করা হলেও পরবর্তীতে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ১৪ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেন ।
শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবন:
শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটেছিল ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় । ওই বছরই বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে আসেন তদানীন্তন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং খাদ্য মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী । ওই সময়ে বিদ্যালয়ের ছাদ সংস্করণের দাবি নিয়ে একটি দল তাদের কাছে যায় । দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিব ।
১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি গোপালগঞ্জ মহকুমা মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এবং মহকুমা মুসলিম লীগের ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন । এ সময়ে এক বছর মেয়াদের জন্য নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ।
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির ,প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ প্রমুখ যোগদান করেন । শেখ মুজিব এই সম্মেলনের অন্যতম আয়োজক ছিলেন ।
তিনি ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। সেখানেই তিনি বাংলার অগ্রনী মুসলিম নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি জননেতা মাওলানা ভাসানীর সান্নিধ্যে আসেন । তাদের থেকেই তিনি উদীয়মান রাজনীতির বরপুত্র হিসাবে আখ্যায়িত হন । এভাবেই এগিয়ে যায় এই মহান মনীষীর জীবন ।
রাজনৈতিক জীবনে গড়ে ওঠে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।
জাতীয় শোক দিবস রচনা
ছয় দফা ও সাতই মার্চের ভাষণ:
দূরদর্শী এবং আদর্শিক নেতা হওয়ার সুবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য লক্ষ্য করছিলেন । অনেক রাজনীতিবিদরা বৈষম্য সম্পর্কে আপত্তি ও তুলতে থাকেন । বৈষম্য নিরষনে শেখ মুজিব ছয়টি দাবি উত্থাপন করেন । যা ছয় দফা নামে পরিচিত । বাঙালির বহু আকাঙ্ক্ষিত এই দাবি পরবর্তীকালে বাঙালির প্রাণের দাবি ও বাঁচা মরার দাবি হিসেবে পরিচিতি পায় । ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের জাতীয় একটি সম্মেলনে শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন । যা ছিল মূলত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসিত পরিপূর্ণ একটি রূপরেখা । ছয় দফার দাবি গুলো নিম্নরূপ–
- ১. যুক্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীনে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার হবে । সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান ।
- ২. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেবলমাত্র দুইটি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে । দেশ রক্ষা ও বৈদেশিক নীতি । অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ ।
- ৩. সমগ্র দেশের জন্য দুটি পৃথক অথচ অবাধে বিনিয়োগযোগ্য মুদ্রা, না হয় বিশেষ শর্তসাপেক্ষে একই ধরনের মুদ্রা প্রচলন ।
- ৪. ফেডারেশনের অঙ্গ রাষ্ট্রগুলো কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে । তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে ।
- ৫. অঙ্গ রাষ্ট্রগুলো নিজেদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার মালিক হবে । এ নির্ধারিত অংশ তারা কেন্দ্রকে দেবে ।
- ৬. আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রের অঙ্গ রাষ্ট্রগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার সক্ষমতা দিতে হবে ।
১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । এই নির্বাচনে পাকিস্তানের সংসদীয় মোট আসন ছিল ৩০০ টি । জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আসন বরাদ্দ হয় ১৬৯ টি ।
তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু এবং তার দল ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করেন । এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশিক পরিষদে ৩১০ আসনের মধ্যে ২৯৮ টি আসলে জয়লাভ করে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষের ম্যান্ডেট লাভ করেন। কিন্তু সরকার গঠনের সুযোগ না দিয়ে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান পহেলা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন ।
প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল যে কোনভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা । কিন্তু বাংলার জনগণ তা মেনে নেয়নি । তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । অনেক বাধা বিপত্তির পর সাথে মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভায় বিপুলসংখ্যক জনগণ একত্রিত হয় । সাধারণ জনসভা এবং সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তার সাথে মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন-
রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো । এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বে ইনশাআল্লাহ । এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম । এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম । জয় বাংলা ।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তণ ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা:
ছয় দফা দাবি এবং স্বাধীনতার ঘোষণার পর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় অসংখ্য বার। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারা ভোগ করেছেন । তন্মধ্যে বিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাত দিন কারা ভোগ করেন । বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তিনি কারা ভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে । তিনি তার জীবনের প্রায় ১৩ বছর কারাগারে ছিলেন।
দীর্ঘ নয় মাস রক্ত ক্ষয়ী লড়াইয়ের বাঙ্গালীদের বিজয় এবং ওদের পরাজয় নেমে আসে ।
তিনি মুক্তি পান কারাগার থেকে । ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশের ফিরে আসেন । প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের সম্মুখে সেদিন বক্তৃতা পেশ করেন ।
জাতীয় শোক দিবস রচনা Pdf
বাংলাদেশে এসে শেখ মুজিবুর রহমান অল্প দিনের জন্য অন্তবর্তী কালীন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তান আইন সভার জন্য নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১১ জানুয়ারিতে নতুন রাষ্ট্রের প্রথম সংসদ গঠন করেন । ১২ই জুন সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নিকট হস্তান্তর করেন । এভাবে ধীরে ধীরে তিনি পূর্ণাঙ্গ দেশ গঠনের কাঠামো তৈরি করেন । এবং স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের কৃতিত্বের নজির স্থাপন করেন ।
মর্মান্তিক ট্রেজেডি:
১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই আগস্ট প্রত্যুষে একদল বিপথগামী ও ক্ষমতা পাগল সেনা কর্মকর্তা দিয়ে রাষ্ট্রপতির ধানমন্ডির বাসভবন ঘিরে ফেলে এবং শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের হত্যা করে ।
নিহতদের মধ্যে অন্যতম হলেন বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল ,শেখ জামাল ও শিশু পুত্র শেখ রাসেল । পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী কামাল ,ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি । শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিল উদ্দিন । শুধুমাত্র দেশের বাইরে থাকায় শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান ।
উপসংহার:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবনের মূল্যবান সময় গুলো কারাগারে কাটাতে হয়েছে।
জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে তার জীবনে বারবার দুঃসহ ও নিঃসঙ্গ কারাজীবন নেমে আসে । তবে তিনি কখনো আপোষ করেন নাই । ফাঁসির দড়িকেও ভয় করেন নাই । তার জীবনে জনগণই ছিল অন্তপ্রাণ । মানুষের দুঃখে তার মন কাঁদতো । বাংলা দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন, সোনার বাংলা গড়বেন–এই ছিল তার জীবনের একমাত্র ব্রত । অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এই মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের মাধ্যমে মানুষ উন্নত জীবন পাবে, দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পাবে- এই চিন্তায় প্রতিনিয়ত তার মাথায় ঘুরপাক খেতো । যে কারণে তিনি নিজের জীবনের সব সুখ আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে জনগণের দাবি আদায়ের জন্য এক আদর্শবাদী ও আত্মহত্যাগী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন । বাঙালি জাতিকে দিয়েছেন স্বাধীনতা । বাঙালি জাতিকে বীর হিসেবে বিশ্বে দিয়েছে অনন্য এক মর্যাদা । স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামে বিশ্বে এক রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন । বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন সফল করেছেন ।
বাংলার মানুষের মুক্তির এই মহানায়ক স্বাধীনতার সংগ্রাম শেষে যখন জাতীয় পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন নিশ্চিত করছিলেন , তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তাকে জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে । স্বাধীন বাংলার সবুজ ঘাস তার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে । বাঙালি জাতি ললাটে চিরদিনের জন্য কলঙ্কের টিকে রেখে দিয়েছে খুনিরা।
প্রতিবছর ১৫ আগস্টের সে ভয়াবহ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে ঘোষণা করা জাতীয় শোক দিবসের । দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয় । এই দিবস উপলক্ষে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা অনুষ্ঠান, স্মরণসভা ও কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ।
এছাড়াও সর্বস্তরের জনগণ ও তাদের প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বিভিন্নভাবে । রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ দিবস উপলক্ষে বাণী প্রদান করেন । বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা, জাতীয় টেলিভিশনে ও রেডিও চ্যানেল এ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করে । এভাবে দিনটি পালন করা হয় । তবে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমেই দিনটির যথার্থ মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে ।
শেষ কথা
১৫ আগস্ট সম্পর্কে রচনা নিয়ে লিখিত আজকে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাদের সাথে জাতীয় শোক দিবস রচনা শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করি ইতোমধ্যে আপনারা রচনাটি সংগ্রহ করতে পেরেছেন। সুতরাং আপনার যদি এই পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে সকলের সাথে শেয়ার করার অনুরধ রইল।
আরও দেখুনঃ